শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের নায়ক নায়িকার ছবি খাতার মলাটে

ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের নায়ক নায়িকার ছবি খাতার মলাটে

as74 copyপীরজাদা সৈয়দ শামীম শিরাজী: শিশুরা বরাবরই অনুকরণপ্রিয়। তারা যা দেখে তাই শেখে। এজন্য শিশুদের  অভিভাবকরা তাদের দিকে যথেষ্ট পরিমাণে নজর বা খেয়াল করে থাকেন। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারা আমাদের আশা-ভরসার স্থল। সেই শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, যা মোটেও বরদাস্ত করা যায় না। শিশুদের খাতায় শিক্ষণীয় বিষয়ের পরিবর্তে টেলিভিশন চরিত্রের উপস্থিতি বাড়ছে। বিশেষ করে খাতার মলাটে ভারতীয় বিভিন্ন সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকাদের ছবির ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। গ্রামাঞ্চলে মাস কয়েক আগে প্রথম এ প্রবণতা দেখা দেয়। বর্তমানে খোদ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাতেও দেখা মিলছে এ ধরনের খাতার। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। দেশের সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাঙ্গনের বিশিষ্টজনদের মতে, এ ধরনের প্রবণতা শিশুদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ীসহ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতীয় সিরিয়ালের ‘পাখি’, ‘কিরণমালা’, ‘জল নূপুর’সহ বিভিন্ন চরিত্রের ছবি সংবলিত খাতা বিক্রি হচ্ছে দোকানে দোকানে। এর মধ্যে একটি খাতায় স্টার জলসার কিরণমালা সিরিয়ালের প্রধান চরিত্রের অভিনেত্রীর বড় রঙিন ছবি দেখা যায়। খাতাটির নামও দেয়া হয়েছে কিরণমালা। এছাড়া উপরে রয়েছে স্টার জলসার লোগো। এমনি ‘পাখি’ খাতাতেও দেখা যায় পাখি চরিত্রের অভিনেত্রী ও এক অভিনেতার রঙিন ছবি। অনেক বিদ্যালয়েরই নিজস্ব খাতা রয়েছে। সেখানে এই আপত্তিকর প্রচ্ছদযুক্ত খাতাগুলো স্থান করে নিতে না পারলেও যেসব স্কুলে নিজস্ব খাতা নেই সেসব স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা মূলত ওই খাতাগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ছে। টাঙ্গাইলের একজন গণমাধ্যম কর্মীর দাবি, খাতাগুলো রাজধানীর চকবাজার এলাকা থেকে গ্রামে যাচ্ছে। ফার্মগেটের এক বিক্রেতার মতে, পরিবারে সিরিয়াল দেখার প্রবণতা বাড়ায় শিশুরা এসব চরিত্রের প্রতি আগ্রহী হয়। আর খাতায় এ ধরনের ছবি দেখলে তারা তা কিনতে চায়। অধিক মুনাফার জন্য এ ধরনের খাতা বিক্রি করা হলেও তা শিশুদের মধ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলেই মন্তব্য বিশিষ্টজনদের। তা ছাড়া মুনাফার জন্য শিক্ষার্থীদের এভাবে প্রলোভনে ফেলাকে অন্যায় বলেও মনে করছেন তারা। এ বিষয়ে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোস্তফা জামান আব্বাসি বলেন, দেশি-বিদেশি বিষয় না, বিষয় হচ্ছে শিশুদের উপযোগী না এমন যা ব্যবহার করা হচ্ছে তাই অন্যায়। আরও একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের মতে, শিশুদের মানসিকতা ও বয়স অনুযায়ী তার উপকরণ তৈরি করতে হবে যাতে সে আনন্দ পায়, তার মানসিকতার বিকাশ ঘটে, যা তার জন্য হয় শিক্ষণীয়। আর খাতায় যদি ছবিই ব্যবহার করতে হয়, তাহলে এমন ছবি ব্যবহার করা যেতে পারে যা তার সহায়ক। তিনি আরও বলেন, এক সময় ফুল, পাখি, প্রাকৃতিক দৃশ্যসহ শিশুদের মানানসই ছবি থাকত খাতার মলাটে। এখন তা দেখা যায় না। শিক্ষার্থীদের বয়স অনুযায়ী যদি বিষয় দেয়া না হয় তবে তো বিরূপ প্রভাব পড়বেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন এ বিষয়ে বলেন, এ ধরনের বিষয়গুলো মোটেও শিশুদের উপযোগী না। এক বাক্যে বললে এ ধরনের ছবি ব্যবহার করা মোটেই উচিত না। তিনি বলেন, আসলে সমাজটাই এমন হয়ে যাচ্ছে যে টিভি, ইন্টারনেটের অনেককিছুই শিশুর উপযোগী নয়। যে ধরনের সিনেমা চরিত্র ব্যবহার করা হচ্ছে এটি মুনাফার উদ্দেশ্যে, ব্যবসার উদ্দেশ্যে। এটা ঠিক না। সিরাজগঞ্জ জেলার কীর্তিমান পুরুষ গাজী সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী স্মৃতি সংসদের সভাপতি সৈয়দ মুনীর শিরাজী জানান, ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে, বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়েু, সদা সত্য কথা বলিব, সত্য বৈ মিথ্যা বলিবো না-এসব অমূল্য বাণী স্কুলগামী শিশুদের খাতার মলাটে তুলে না ধরে ভারতীয় সিরিয়ালের আপত্তিকর ছবি ছাপানো বড়ই অন্যায় ও গর্হিত কাজ বটে। তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। সরকার যখন অটিজম (বিকলাঙ্গ) শিশুদের সক্ষম ও যোগ্য করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট রয়েছেন, ঠিক তখনি একটি স্বার্থান্বেষী মহল স্কুলগামী সুস্থ শিশুদের খাতায় ভারতীয় সিরিয়ালের চরিত্রের ছবি প্রকাশ করে তাদের অসুস্থ করে তুলছে। এদিকে সরকারের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। লেখক : সাংবাদিক, সংগঠক ও কণ্ঠশিল্পি

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com